Description
১২০৪ খ্রিস্টাব্দের এক মধ্যাহ্নে বরেন্দ্রীর রাজচক্রবর্তী পঞ্চগৌড়েশ্বর মহারাজ লক্ষ্মণসেন যখন ভোজনে বসেছেন, তখন সংবাদ এল অশ্বব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে আঠারোজন তুর্কি সেনা নগর লক্ষ্মণাবতীতে প্রবেশ করে নগর অধিকার করেছে। আকস্মিক এই দুঃসংবাদে রাজা লক্ষ্মণসেন মধ্যাহ্নভোজন অসমাপ্ত রেখে পরিবারসহ রাজপ্রাসাদের খিড়কির দোর দিয়ে পূর্ববঙ্গে পালিয়ে গেলেন। বরেন্দ্রীসহ সমগ্র বঙ্গদেশ বিন বখতিয়ার খিলজির অধীনত হল। ‘অষ্টাদশ অশ্বারোহী’ উপাখ্যানের মূল উপজীব্য হল বঙ্গদেশে মুসলমান শাসনের সূত্রপাতের কারণ পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করা। সেই অর্থে এই কাহিনি ঐতিহাসিক আবার ঠিক ঐতিহাসিকও নয়। এই আখ্যানের একপ্রান্তে প্রবল পরাক্রান্ত রাজা লক্ষ্মণ ও সমাজপ্রভুরা। অন্যপ্রান্তে সামান্য এক স্বর্ণবেনে। স্বর্ণবেনে মধুসুদনের মাত্র চারপটিক শস্যভূমি ছিল, সেই ভূমি আত্মসাতের নিকৃষ্ট রাজনীতি এই কাহিনির মূল পরিকল্পনা। রাজা লক্ষ্মণ বৃদ্ধবয়সে রাজসিংহাসনে আরোহণ করে শিল্প-সাহিত্য এবং যৌনাচারে মগ্ন ছিলেন। তাঁর নামে রাজ্য শাসন করতেন রাজমহিষী বল্পভা এবং তাঁর সহোদর কুমারদত্ত। কবি হলায়ুধমিশ্র ছিলেন বজ্রভা ও কুমারদত্তের নিকটজন। ভূস্বামী হলায়ুধ রাজপরিবারের বলে বলীয়ান হয়ে বেনের চারপাটক ভূমি হরণ করতে চেয়েছিলেন। কেবলমাত্র হলায়ুধ নন, সেদিনের সেন রাজসভার অন্যতম জ্যোতিষ্ক কবি ধোয়ী, শরণ, আচার্য গোবর্ধন উমাপতিধর, এমনকি জয়দেব সকলেই ছিলে রাজপক্ষে অর্থাৎ বেনে বিরোধী। রাজার বৈরী হলেন বেনে মধুসুদন আর তার ফল ভোগ করলেন বেনের পুত্রবধূ মাধবী। রাজশ্যালক লম্পট কুমারদত্ত ক্ষমতার দস্তে মাধবীকে ধর্ষণ করলেন। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত এই উপন্যাস পাঠককে একটি সত্যের মুখে দাঁড় করাতে ইচ্ছুক। ইতিহাস রচিত হয়, শাসকের কলমে, শাসকের প্রয়োজন অনুসারে। অথচ ইতিহাস সৃষ্টি করে সাধারণজন, যাদের পরিশিষ্টেও স্থান হয় না। এই সাধারণ মানুষেরাই রাজদণ্ডের অহমিকাটিকে মাটিতে আছাড় মেরে ধ্বংস করে। নির্মাণ করে নতুন ইতিহাস। রাষ্ট্রব্যবস্থা সকল দেশে, সকল কালে এমনই। এই আখ্যান তাই শুধু ইতিহাসের বিবর্ণ পৃষ্ঠার উদ্ধারই নয়, রাষ্ট্রক্ষমতার মূল রহস্যটি বুঝে নেওয়ার প্রয়াসও বটে।
Reviews
There are no reviews yet.