Description
ভূমিকা
আমার পড়া প্রথম চিত্রনাট্য সত্যজিৎ রায়ের “পথের পাঁচালী ”। তারপর একে একে ওঁর অন্য চিত্রনাট্যগুলি পড়লাম। পড়ে ভীষণ দুঃখ পেয়েছিলাম। দুঃখ হয়েছিল নিজের জন্য। আমি তাে ছবি – টবি আঁকতে পারি না , যা আঁকতে পারি তা আঁকিবুকি ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু এর অনেক আগের থেকেই ফিল্ম – এর প্রেমে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। ফিল্ম যে আমাকে করতেই হবে। কিন্তু চিত্রনাট্য লিখতে গেলে যদি প্রতিটি দৃশ্যের ছবি আঁকতে হয় , তাহলে আমার আর সিনেমা করা কোনােদিনই হয়ে উঠবে না। তারপর অন্যান্য বিখ্যাত পরিচালকদের চিত্রনাট্য পড়ে দেখলাম , এক একজন এক একরকম ভাবে লেখেন , এক একজন এক একরকম ভাবে ভাবেন , ছবি করেন। অনেক ছবি দেখার আগেই ছবিগুলাের চিত্রনাট্য পড়ে ফেলেছিলাম। ছবিগুলাে দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম ছবির অনেক কিছুই চিত্রনাট্যে নেই। তখন মনে হল তাহলে আমিও চেষ্টা করে দেখতে পারি। আর এখান থেকেই সবকিছুর শুরু। আমার সবচেয়ে বড় সঙ্গী ছিল দৃশ্য ভাবতে পারার ব্যাপারটা। চিত্রনাট্য বগল দাবা করে ছবির শুটিং শুরু করতে গিয়ে দেখলাম এমন অনেক কিছুই সেই মুহূর্তে মাথায় আসছে যা আমি একেবারেই আগে ভাবিনি। আগের থেকে না জানা , না বুঝতে পারা , না কল্পনা করা অনেক কিছুই এভাবেই আস্তে আস্তে আমার ছবির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে এবং তারা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে ছবিতে। এক এক সময় এমনও মনে হয়েছে , এমনটা না হলে আমি বােধহয় ছবি করতে পারব না। সবকিছুই আগেভাগে ভেবেচিন্তে নিয়ে এমনকি সমস্ত দৃশ্যের স্কেচ এঁকে তাতে আর কোনই রূপান্তর আসবে না — এই ভেবে ছবি করার। ধাত আমার নেই। স্ক্রিপ্ট লেখার সময় তাই আমি বুঝতে পারি এটাই সব নয় , অজানা অনেক কিছুই আছে যা ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে আমি দেখতে পাব , বুঝতে পারব , অনুভব করতে পারব। ‘উত্তরা ’ ছবিতে বিশাল বড় যে পাথরটি শেষ দৃশ্যে গড়িয়ে পড়ে সেই পাথরটিকে আমি শুটিং করতে গিয়ে লােকশানে রােজ দেখতাম। একদিন মনে হল পাথরটা আমাকে বলছে আমিও এক আধটু অভিনয় – টভিনয় করতে পারি , দেখই না একবার চেষ্টা করে। তারপর একদিন চোখ বুজে দেখলাম পাথরটা গড়াচ্ছে , গড়াচ্ছে , আর গড়াচ্ছে। পরে , সেই পাথর গড়িয়ে পড়ার দৃশ্যটি ঢুকে পড়ল স্ক্রিপ্টে। এরকম আর কত কী আমার ছবি জুড়ে ঘটে গেছে। গল্প নিয়ে ছবি করতে শুরু করে , গল্প থেকে বহুদূরে গড়িয়ে গেছে আমার ভাবনা , গল্পের সুতাে ছিড়ে। অনেকেই হয়তাে , গল্পকার বা তাদের পরিবার – পরিজন রুষ্ট হয়েছেন কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না । নিজের প্রকাশিত লেখা নিয়ে ছবি করতে গিয়েও এমন ঘটেছে। সাহিত্যের সঙ্গে সিনেমার মিল – টিল নিয়ে আমার কোনো দায়দায়িত্ব নেই। দায় আমার শুধু সিনেমার কাছে। বিদেশে ভুরিভুরি চিত্রনাট্যের সংগ্রহ প্রকাশিত হয় , এবং সেইসব বইয়ের কাটতিও ব্যাপক । এবং এটা ঘটছে বহুকাল ধরে ।
কলকাতার ‘দে’জ পাবলিশিং’ আমার কয়েকটি চিত্রনাট্য নিয়ে একটি সংগ্রহ প্রকাশ করবেন জেনে আমি তাদের সাহসকে বার বার ধন্যবাদ জানাই , একরাশ কৃতজ্ঞতা।
– বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
Reviews
There are no reviews yet.