Description
২০১৩ সাল। ভারতীয় ইংরাজির বইবাজারে শোনা গেল একটা নতুন নাম— রাহুল পণ্ডিতা। লেখা বই: ‘Our Moon Has Blood Clots’। প্রকাশক: Penguin Random House। অনতি ভবিষ্যতে যা পরিণত হয় National Best Seller। সমালোচকমহলে সাড়া পড়ে যায়। হয়ে ওঠে ‘Most powerful non-fiction book of the year’
পেশায় সাংবাদিক এবং জন্মসূত্রে কাশ্মীরি পণ্ডিত রাহুল প্রায় নিজের রক্ত দিয়েই লিখেছেন ‘আঁখো দেখি’ বিবরণ। গত শতকের আটের দশক থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সংখ্যা নিম্নগামী হয়ে পড়ছিল। ক্রমশ সংখ্যালঘুতে পরিণত হতে থাকা একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তীব্র আগ্রাসন শুরু হয়ে যেতে থাকে সেই সময় থেকেই। পেটানো হতে থাকে পণ্ডিত দেখলেই, জ্বালিয়ে দেওয়া হয় মন্দির – ঘরবাড়ি, ধর্ষিত হয় পণ্ডিত পরিবারের রমণীরা।
নয়ের দশকে পা দিতেই কাশ্মীরে প্রকট হয়ে ওঠে দুটি শ্রেণী। কিছু ভারতীয় কাশ্মীরি পণ্ডিত এবং পাকিস্তানি আদর্শে উদ্বুদ্ধ অসংখ্য মানুষ। আজকের রাজনীতি যা-ই সমীকরণ দিক না কেন, একদিন এই কাশ্মীরের বুকেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করেছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির সমর্থকেরা, তাঁর মৃত্যুর পরে উৎসব পালিত হয়েছিল শ্রীনগরের হাটেবাজারে। এমনকি ক্রিকেট খেলাতেও পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচে, ভারত জিতলে পাথর ছোঁড়া হয়েছে পণ্ডিতদের বাড়ির জানলায়।
নাহ্, এগুলো কোনও বানানো গল্প নয়। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতাকে নিজের চোখে দেখে রাহুল লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ছোট্ট রাহুলের চোখ দিয়ে দেখতে দেখতে আমাদের মনে ফিরে ফিরে আসে একটিই বাক্য— এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়…।
হত্যাকাণ্ডের শৃঙ্খলা দিয়ে শুরু হয় অত্যাচার। প্রশাসনের হাত দিয়ে বালির মতো গলতে থাকে ল অ্যাণ্ড অর্ডার। জিগির ওঠে: হ’ম কেয়া চাহতে, আজাদি!’
আজাদি কীসের?
নাহ্, ভারত থেকে মুক্ত করতে হবে কাশ্মীরকে। বাড়তে থাকে চাপা উত্তেজনা।
১৯৯০ নাগাদ সাড়ে তিন লক্ষ পণ্ডিতকে নিজেদের ভদ্রাসন ছেড়ে চলে যেতে হয়। জম্মুর তীব্র গরমে এক চিলতে ঘরের সংসার, কোথাও ক্যাম্পের দৈনন্দিন চালচিত্র, অপমানের তেঁতো ওষুধ গিলতে বাধ্য হয়ে কেমনভাবে কাটতে থাকে পণ্ডিতদের জীবন তারই বিশদ বিবরণ দিয়েছেন রাহুল। কেবল তা-ই নয় স্বাধীনতার পর পরই কাশ্মীরে জনজাতির আক্রমণ নিয়েও রয়েছে মর্মান্তিক বর্ণনা।
অন্যদিকে রাষ্ট্রের বঞ্চনা এবং রাজনীতির মৌনী বাবাদেরও মুখোশ খুলে দিয়েছেন রাহুল এই বইতে।
এই স্মরণগ্রন্থ কেবল বিচ্ছদেরই নয়, মিলনেরও। প্রতি পদে পদে হেরে ফেরা মানুষের জেতার কাহিনি। পণ্ডিতা পরিবারের অজস্র ব্যক্তিগত সংস্মরণে চোখের কোণ ভিজে ওঠে। ঘর-সংসার হারানোর পর রাহুলের মায়ের বাকশক্তিও হারিয়ে যায়। জানেন ওঁর শেষ বাক্য কী ছিল? ‘‘আমাদের কাশ্মীরের বাড়িতে বাইশটা ঘর ছিল।’’
Reviews
There are no reviews yet.