Description
শিরোনামে এমন গম্ভীর শব্দ দেখে প্রথমেই পালাতে ইচ্ছে করে। ভাইফোঁটার মতো এক সহজ ও অনাড়ম্বর লোকাচার নিয়ে লেখাও যদি এতই ‘ভূমিকাসুলভ’ হয়, তাহলে তো সমস্ত চেষ্টাই মাটি! বরং অন্যভাবে ভাবি। শিরোনাম দিতে হয় বলে দেওয়া। সবদিক দেখেশুনে, এই ঢাল ব্যবহারই নিরাপদ মনে হল। ফোঁটার মতো। একবার কপালে এসে জুটলে, যমেরও সাধ্য নেই ছোঁয়ার।
কিন্তু এতকিছু থাকতে হঠাৎ ভাইফোঁটা নিয়ে কেন? যে রীতি স্বাভাবিকভাবেই ফিরে-ফিরে আসে প্রতিবছর, তাতে বিশেষত্ব খোঁজার কারণ কী? আদৌ কি বিশেষত্ব রয়েছে কিছু? ভেবে দেখতে গেলে, বচ্ছরকার এই আচার আমায় কৌতূহলী করেছিল মন্ত্রের জন্য। অবশ্য ছড়াও বলা চলে। তবে মন্ত্র যে কেবল সংস্কৃতেরই হতে পারে, এ-কথা বিশ্বাস করি না আমি। শুভকামনার জন্য যা-কিছু উচ্চারিত, তা-ই আমার কাছে মন্ত্র। শ্লোক।
কাজের কথায় আসি। যেটা প্রচলিত মন্ত্র, কমবেশি সকলেরই জানা। বিশেষত বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগই এই মন্ত্রের সঙ্গেই পরিচিত। পঞ্জিকাতেও ‘ভাতৃদ্বিতীয়ায় প্রচলিত বাংলা প্রবচন’ বলে সেই চেনা মন্ত্রেরই উল্লেখ—
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেন যমকে ফোঁটা
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।
এই চার লাইনই সাধারণভাবে সর্বত্র শোনা যায়। প্রমিত বাংলায় ভাইফোঁটার মন্ত্রের মূল কাঠামো এটাই। পরবর্তী দু-লাইন অবশ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাল্টে-পাল্টে গেছে। কোথাও—
যম যেমন হন চিরজীবী
আমার ভাই যেন হয় তেমন চিরজীবী।
কোথাও আবার—
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে ভাই হোক অমর।
তাও না হয় বোঝা গেল। কিন্তু এতেই শেষ? পাশাপাশি, ফোঁটা দেওয়ার সময়ের আচারও আছে বৈকি! জল দিয়ে কপাল মুছিয়ে দেওয়া, মন্ত্র পড়তে পড়তে বাঁ-হাতের কড়ে আঙুল দিয়ে তিনবার ঘি-চন্দন-কাজল মেশানো ফোঁটা দেওয়া, ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করা, প্রদীপের ওম মাথায় ছুঁইয়ে দেওয়া— এ-সবই ভেসে এসেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। যাবতীয় আচার ও আনন্দ মিলেমিশেই হাজির হয় দিনটি। একত্রিত হন পরিবারের সদস্যরা।
আর যাঁদের ফোঁটা দেওয়ার কেউ নেই? হ্যাঁ, এ-বই তাঁদেরও। তাঁদের মনখারাপের বন্ধু হয়ে উঠুক এই বই। যেমন আমিও, খোঁজের মধ্যে দিয়েই ফিরে পেতে চাইছি শৈশব-কৈশোরের মায়াময় দিনগুলোকে।
Reviews
There are no reviews yet.