Description
সাবর্ণিজাতক। অর্থাৎ সাবর্ণির জন্মকথা। সাবর্ণি কে? সূর্যের শক্তি সবর্ণার পুত্র। তিনি কোনো অপ্রাকৃত দেবতা নন, বরং পৃথিবীরই এক বিশেষ ব্যক্তি যিনি ওই পদে উন্নীত হয়েছিলেন। কে সেই ব্যক্তি? রাজা সুরথ। শ্রীশ্রীচণ্ডী, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, দেবীভাগবত প্রভৃতি গ্রন্থে আমরা তাঁর কথা পাই। পুরাণ অনুযায়ী তিনি স্বারোচিষ মন্বন্তরের সময়কালে জীবিত ছিলেন। আধুনিক গণনায় সময়টা তাম্রাশ্ম যুগ, যখন প্রস্তরযুগ শেষ হয়েছে। প্রথম সভ্যতার নির্মাণ শুরু করেছে মানুষ। তামা ও পাথরের অস্ত্রই সেই সভ্যতা নির্মাণের উপকরণ। কিন্তু দ্বেষ, ক্রুরতা, নীচতা, মহত্ত্ব, মৈত্রী, প্রীতি এই সমস্ত চিরন্তন দোষ ও গুণাবলি সে সমাজে ছিল আজকের মতোই। আর ধর্মভাবনায় বীজরূপে নিহিত ছিল মাতৃভূমির প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা। আজ যেমন আমরা দেশের মাটিকে মা বলে জানি, সেই যুগের মানুষ তেমনি মায়ের মধ্যে দেশকে খুঁজে পেতেন। সুপ্রাচীন এক প্রত্নসভ্যতার চিহ্ন বুকে নিয়ে বীরভূমের সুপুরে আজও রয়েছে সুরথ রাজার ঢিবি। সেই ধূসর অতীতের বাঙালি রাজার জীবনের কিছু দৃশ্যপটের মধ্য দিয়ে তাঁর সাবর্ণিরূপে নবজন্মের তাৎপর্য অনুধাবনের চেষ্টাই এই উপন্যাসের উপজীব্য। পুরাণ অনুযায়ী সুরথই প্রথম পৃথিবীর বুকে মাতৃকার উপাসনাকে বহুল প্রচলিত করে তুলেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন মহাবৈশ্য সমাধি। এ হল সমাজের রাজশক্তি ও বণিকশক্তির আশ্চর্য সমন্বয়। ঠিক রূপকথার গল্পের মতো। কিন্তু সে গল্প বারবার আমাদের আকর্ষণ করে চিরকালীন এক সত্যের দিক। সেই সত্যটি হল: নিজের শিকড়কে, নিজের উৎসকে অগ্রাহ্য করলেই অন্ধকারের আগমন ঘটে জীবনে হোক সে জীবন ব্যক্তিগত কিংবা জাতীয় জীবন। মূলে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই সমস্ত জাতি তার গৌরবের শিখরে আরোহণ করেছে। সুরথের এই কাহিনিও মূল হারিয়ে আবার মূলে প্রত্যাগমনের কাহিনী। সুপ্রাচীন এক মাতৃকা উপাসক জাতির দুর্গানাম অবলম্বন করে পরাধীনতার শাপমোচনের গল্প।
Reviews
There are no reviews yet.