Description
যশোরের দক্ষিণডিহির ছোট শাকম্ভরী গ্রাম্য জীবন ছেড়ে একদিন চলে এলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বধূ হয়ে। শাকম্ভরী ওরফে শাকু হয়ে উঠল সারদাসুন্দরী ওরফে সারদা। বিস্মৃত হয়ে গেল তার গ্রাম, নদীপথ। রূপকথার মতো শুরু হলো যে কাহিনী তার বিস্তার ছিল সম্পূর্ণ অন্য ছকেই বাঁধা। ইচ্ছা বস্তুটিকে সারাজীবনের জন্য স্থান দিল আস্তাকুড়ে। দেবেন্দ্রনাথের সহধর্মিনী কি পেয়েছিল তার আবেগ ভরা ভালোবাসার মর্যাদা! তার ধর্ম উপাসক স্বামীর ইচ্ছায় তাকে করতে হতো স্বামীগমন। নতুবা তার স্বামীর কক্ষে প্রবেশের অনুমতিটুকুও ছিল না। লেখক সেই আকুতি কেই বসিয়েছেন সারদাসুন্দরীর মুখে-
“ভালোবাসা মানে শুধু সহবাস? তার বেদ-বেদান্ত আমি জানিনে। তবে কি বেদে এই কথা বলা হয়েছে? নাকি অতিরিক্ত শাস্ত্রপাঠ তাকে…? জানিনে।”
সারাজীবন প্রতিবাদের সামান্যতম প্রচেষ্টাও না করে বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন তার বৃহৎ সংসারকে। বিলাসব্যসনে জীবনপাত করা তার স্বামীকে দেখেছেন ডাল, রুটি দিয়ে দিনপাত করতে। দ্বারকানাথ ঠাকুরের বিপুল সম্পত্তি কিভাবে ধূলায় পর্যবসিত হলো দেবেন্দ্রনাথের উদাসীনতার জন্য আরও সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। দেবেন্দ্রনাথের কঠোর দৃষ্টিতে তার বিধবা ভ্রাতৃবধূ অবধি ছাড় পাননি। ত্রিপুরাসুন্দরী দেবী তার বক্রোক্তি করেন-
“তিনি তো অসহায় বিধবা ভ্রাতৃবধূর সবই কেড়ে নিলে।”
ব্রাহ্মধর্মের পথে অগ্রসর হয়ে ঠাকুরবাড়িতে পূজা-আর্চার পুরাতন সমস্ত পাট চুকিয়ে দিলেন দেবেন্দ্রনাথ। সারদা সুন্দরী এর ভিন্নমতের অধিকারী হলেও আবারও প্রতিবাদ করলেন না। স্বামীর সমস্ত অন্যায় আবদারের যন্ত্রণার বিষপান করে গেলেন সমগ্র জীবন জুড়ে।
ছ’বছরের সেই বালিকার সারদাসুন্দরীতে রূপান্তরিত হওয়া এক রক্তমাংসের নারীর জীবনবোধ, যৌনতাবোধ, সংস্কৃতি ও যন্ত্রণার কথায় এই উপন্যাসে মুদ্রিত হয়েছে যেখানে, ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের না বলা কাহিনী যেমন ধরা পড়েছে তেমনি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বিস্মৃতির আড়ালে থাকা প্রিন্স দ্বারকানাথ ও তার জীবনকে। চোদ্দ সন্তানের মা সারদাসুন্দরী ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ ত্যাগ করলেন। চিরকাল প্রেম বঞ্চিত মানুষটির অন্তিম সময়ে ভালোবাসার মানুষের নির্মম পরিহাস লেখকের লেখনীতে প্রাণবন্ত হয়েছে-
“দেবেন্দ্রনাথ বিদায়লগ্নে পুষ্প চন্দন অভ্র দিয়ে সাজিয়ে দিলেন তাকে।”
বিশেষ কৃতজ্ঞতা : দীপাঞ্জন দাস
Reviews
There are no reviews yet.